BIOS (উচ্চারণঃ বায়োস), আমাদের কম্পিউটারের ক্ষেত্রে অতি পরিচিত একটি শব্দ।
কম্পিউটারের ব্যাকগ্রাউন্ড এ অনবরত কাজ করতে থাকা এই সফটওয়্যার টি
ভবিষ্যতের জন্য না হলেও এই মুহূর্তে আমাদের কম্পিউটারের অতি প্রয়োজনীয় কিছু
সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখন স্বভাবতই আমরা যারা জানি না তাদের মনে
কিছু প্রশ্ন হতেই পারে, যেমনঃ-
BIOS (বায়োস) আসলে কি?
BIOS কি এমন গুরুত্তপূর্ণ সফটওয়্যার এবং কম্পিউটারের কি কি কাজ করে বা এটি
দিয়ে কি কি কাজ করা যায়?
আপনার প্রশ্নও যদি এধরনের হয়ে থাকে তাহলে কি আর করা পড়তে থাকুনঃ-
BIOS (বায়োস) আসলে কি?
BIOS (বায়োস) এর পুরো অর্থ হচ্ছে “Basic Input/Output System”। কম্পিউটারের
মাদারবোর্ডের Firmware chip [Firmware chip: অর্ধস্থায়ী স্মৃতি ভান্ডারে
রক্ষিত সফটওয়্যার। হার্ডওয়্যার আর সফটওয়্যার এর সাথে সমন্বয় করে কাজ
করে এরা। এদের মধ্যে হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার উভয়ের ধর্ম পরিলক্ষিত
হয়] এর মধ্যে থাকা কত গুলো নির্দেশনার সমষ্টিই হচ্ছে BIOS (বায়োস)।
আমাদের কম্পিউটারের কি-বোর্ড থেকে শুরু করে মাউস, ইউ-এস-বি এবং অন্যান্য
ইন্টিগ্রেটেড/নন-ইন্টিগ্রেটেড ডিভাইস সাপোর্ট করার জন্যে প্রয়োজনীয়
ড্রাইভার গুলো এ বায়োসেই লোড হয়ে থাকে, বুট-অর্ডারে এ এক্সেস করা, হার্ড
ডিস্ক ইনিশিয়ালাইজ করা, মনিটরে আউট-পুট দেখানো সহ আরো অনেক কাজ আসলে এ
বায়োস এর মাধ্যমেই হয়ে থাকে।
BIOS এ যেভাবে এক্সেস করতে হয়?
আপনি যদি আপনার কম্পিউটারের কিছু নাও বুঝেন তারপরেও ইচ্ছে করলে আপনি ঢু
মেরে আসতে পারেন আপনার কম্পিউটারের বায়োস সফটওয়্যারটি থেকে। শুধু খেয়াল
রাখতে হবে যেন কিছু পরিবর্তন না হয়ে যায়। যখন আপনার কম্পিউটার স্টার্ট হয়,
একেবারে নির্ভুল ভাবে বলতে গেলে যখন আপনার মাদারবোর্ডের চিত্র সংবলিত
স্ক্রিনটি ফুটে ওঠে অথবা পুরানো পিসি গুলোর ক্ষেত্রে যখন DOS (ডস)
স্ক্রিনটি ফুটে ওঠে তখন কম্পিউটারের Delete key টি চেপে ধরে রাখলেই BIOS এ
এক্সেস পাওয়া যায়। কিছু কিছু ব্রান্ড এর মাদারবোর্ডের ক্ষেত্রে এটা কাজ নাও
করতে পারে কিন্তু যাইহোক ওখানে বলেই দেওয়া থাকবে যে BIOS এক্সেস করার
জন্যে কোন সুইচটি চেপে ধরা লাগবে। এই স্ক্রিনটাই আমাদের কম্পিউটারের BIOS
এক্সেস করার একমাত্র উপায়।
UEFI BIOS Vs. Traditional BIOS
বায়োস কম্পিউটারের কি কি কাজ করে বা বায়োস দিয়ে কি কি কাজ করা যায় তা জানার
আগে আমাদের জেনে নিতে হবে মডার্ন UEFI BIOS এবং Traditional BIOS এর মধ্যে
কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য। কারণ আপনার কম্পিউটার ভেদে UEFI BIOS এবং
Traditional BIOS এ এক্সেস করার নিয়ম এবং সেটিংস সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এ দুটোর মধ্যে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য, যা প্রথমেই আপনার মনোযোগ
আকর্ষন করবে তা হল UEFI BIOS এর মডার্ন ইন্টারফেস, যা কিনা অনেক বেশি ইউজার
ফ্রেন্ডলি, নেভিগেটও করা যায় অনেক সহজে এবং এ ইন্টারফেসে আপনি আপনার মাউসও
ব্যবহার করতে পারবেন।
নিচে UEFI BIOS সিস্টেম এর একটি উদাহরন দেখানো হলঃ
অন্যদিকে UEFI BIOS সিস্টেম এর বিবেচনায় আমাদের Traditional BIOS সিস্টেম
একটু বেশিই কঠিন এবং এর কনফিগারেশনও কিছুটা সীমাবদ্ধ। সবধরনের উদ্দেশ্য
সাধনের জন্য এই সুন্দর সিস্টেমটি অনেক বছর ধরে অনেক ডিভাইস এ ব্যবহৃত হয়ে
আসছিল, কিন্তু প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে এর কিছু বড় ধরনের সীমাবদ্ধতার
কারনে এটি আস্তে আস্তে মেয়াদোর্ত্তীর্ণ সিস্টেম এ পরিনত হয়ে গেছে, যেখানে
প্রায় সব ব্র্যান্ডের ম্যানুফ্যাকচাররা তাদের ডিভাইস গুলোকে UEFI BIOS
সিস্টেম এ আপগ্রেড করে নিচ্ছে।
এছাড়াও UEFI BIOS সিস্টেমটিতে কিছু অ্যাডভান্স কনফিগারেশন ফিচারও যুক্ত করা
আছে (যেমনঃ সিকিওর বুট)।
উইন্ডোজ ৮ রিলিজ এর সাথে সাথেই UEFI BIOS সিস্টেমটি প্রথম আলোচনায় এসেছিল,
আর এ কারনে খুব সম্ভবত আপনার কম্পিউটারটিও Traditional BIOS সিস্টেমই
ব্যবহার করছে। যাইহোক আপনি যদি ফ্যামিলি গিক হয়ে থাকেন (মানে বাসায় বসে
অনেক কম্পিউটার ঠিক করে থাকেন) তাহলে আরও কিছুদিন আপনাকে এটাই ব্যবহার করতে
হবে।
বায়োস দিয়ে আমরা কি কি করতে পারি?
আমরা বুঝেছি বায়োস কি, কিভাবে এটা এক্সেস করতে হয় এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ
পার্থক্য। তো এখন প্রশ্ন আসতেই পারে যে, এত সব কিছু কিসের জন্য ?
সব ধরনের কম্পিউটার গিকদেরই আসলে কোন না কোন দিন বায়োসে এক্সেস করতে হয়,
কারণ তারা এর মাধ্যমে কিছু অ্যাডভান্স সিস্টেম কনফিগারেশন করার সুবিধা পায়
যেগুলো তারা তাদের অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে (আথবা কিছু সফটওয়্যার এর
মাধ্যমে) ব্যবহার করতে পারে না। এছাড়াও কোন ডিভাইস ঠিক ঠাক মত কাজ না করলে
অনেক ট্রাবল_সুটিং অপশনের মাধ্যমে তারা যাচাইও করে নিতে পারে তাদের
ডিভাইসটিকে।
বুট অর্ডার এর পরিবর্তন
আমাদের কম্পিউটার স্টার্ট হওয়ার সাথে সাথেই এটি অনেকগুলো হাই-প্রাইয়োরিটি
লিস্টের ডিভাইস গুলোকে এক্সেস করা শুরু করে। যেমন আপনার কম্পিউটারে যদি কোন
ডিস্ক ইনসার্ট করা থাকে অথবা অনেক গুলো অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করা থাকে,
তাহলে আপনি এই বুট অর্ডারের মাধ্যমে তা নির্দিস্ট করে দিতে পারেন।
ফ্যান স্পিড, ভোল্টেজ এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করাঃ
কম্পিউটারের ওভার হিটিং প্রব্লেম চলাকালীন সময়ে অথবা কম্পিউটারের সব ডিভাইস
গুলো ঠিক ঠাক মত কাজ করছে কিনা তা দেখার জন্য সবচাইতে সহজ পদ্ধতি হল
বায়োসে একবার ঢু মেরে দেখা। যেমনঃ সব ডিভাইস গুলো ঠিক ঠাক ভোল্টেজ পাচ্ছে
কিনা ইত্যাদি।
ওভারক্লকিংঃ
আপনি ইচ্ছে করলে আপনার কম্পিউটারের জন্য বেধে দেয়া ক্লক স্পীড পরিবর্তন করে নিতে পারেন। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
লক করে রাখুন আপনার কম্পিউটারকেঃ
UEFI BIOS সিস্টেম এর সিকিওর বুট অপশনের মাধ্যমে আপনি আপনার কম্পিউটার এর
বুট মেনুকে আরও সিকিওর করে নিতে পারেন যাতে করে অন্য কেওই আপনার BIOS এ
উপর্যুপরি এক্সেস করতে না পারে। আর এ সুবিধা থাকার কারনেই অধিকাংশ ফ্যামিলি
গিকরা তাদের বায়োসকে UEFI BIOS সিস্টেম এ আপগ্রেড করে নিচ্ছে।
অন্যান্য ছোট ছোট কিছু কাজঃ
উপরে উল্লেখিত এসব কারনেই আসলে বায়োস ব্যবহার করা লাগে। এছাড়াও অন্যান্য
কিছু সেটিংস আছে যেমনঃ
-সিস্টেমের টাইম ঠিক করা
-হার্ডওয়্যার এর প্রোফাইল ফিচার পরিবর্তন করা (UEFI এর ফিচার)
ইত্যাদি কারনে বায়োস এক্সেস করার প্রয়োজন হয়।
আর সবচাইতে মজার ব্যাপার হচ্ছে, ২০১১ সালে BBC এর তথ্য অনুযায়ী আমাদের এই
বহুল আলোচিত Traditional BIOS সিস্টেমটি কয়েক বছরের মধ্যেই আমাদের
কম্পিউটার থেকে অচিরেই হারিয়ে যাবে। যার পরিবর্তে ব্যবহৃত হবে UEFI BIOS
(Unified Extensible Firmware Interface) সিস্টেম। এর ফলে Traditional BIOS
এর ২০-৩০ সেকেন্ডের পরিবর্তে কম্পিউটার চালু হতে সময় নিবে মাত্র কয়েক
সেকেন্ড।
আসলে কি জানেন? বায়োস এর সিস্টেম নিয়ে ঘাটাঘাটি এবং এর অ্যাডভান্স সিস্টেম
নিয়ে কাজ করে আপনিও হয়ে যেতে পারেন আপনার ঘরের কম্পিউটার ডক্টর।
No comments